শুক্রবার ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বহাল তবিয়তে ডিপিডিসির হুজ্জত

কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ   |   মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   78 বার পঠিত

বহাল তবিয়তে ডিপিডিসির হুজ্জত

কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের নামে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলা হলেও এখনো ডিপিডিসিতে স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন মো. হুজ্জত উল্লাহ।

দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে গত সোমবার সংস্থাটির জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে আসামির সম্পদ বিবরণীসহ তলব করে দুদক। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্পদ বিবরণী জমা দেন তিনি। সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় আসামি মো. হুজ্জত উল্লাহর নিজের নামে স্থাবর/অস্থাবর খাতে মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৭০৫ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া আসামি ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১ টাকার সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।
ডিপিডিসির এ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, মো. হুজ্জত উল্লাহর নিজের এবং স্ত্রীর নামে অর্জিত মোট স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। হুজ্জত উল্লাহ তার টাকায় স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের নামে ২০১১-২০১২ সালে ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।

জানা গেছে, দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মো. হুজ্জত উল্লাহর তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের নামে লেকসিটি কনকর্ড ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রকল্পে ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদ আয়কর নথিতে দেখাননি। হুজ্জত উল্লাহর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে মোট ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৯০ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং মোট দায়ের পরিমাণ ১৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭১৩ টাকা প্রদর্শন করেন।

তার ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের আয়কর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সে বছরে তার আয়কর নথিতে পারিবারিক খরচ বাদে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৪ টাকা। তিনি ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৬ (ছয়) বার ১ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করেছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ আছে। যেহেতু প্রদত্ত ঋণ কোনো ব্যয় নয় সেহেতু তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৪ টাকা মর্মে প্রতীয়মান হয়। দায় বাদে তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৮১ টাকা। সুতরাং আসামি হুজ্জত উল্লাহর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শিত অস্থাবর সম্পদ বাদ দিলে তার গোপনকৃত অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১ টাকা।

তার বৈধ আয় পাওয়া যায় ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৯৩ টাকা। যেখানে আসামির ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪ হাজার ৭৯৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। ফলে তার মোট ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৭০৫ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়বর্হিভূত।

অন্যদিকে, আরেক মামলায় স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই আসামি করা হয়েছে। এই মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি মাহমুদা খাতুন স্বামী আসামি মো. হুজ্জত উল্লাহর সহায়তায় নিজের নামে স্থাবর/অস্থাবর খাতে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৪ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি ৮৯ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টাকার সম্পদের তথ্য সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন।
আয়কর নথিতে নিজ আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন এই আসামি। তবে অনুসন্ধানকালে মাহমুদা খাতুনের কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসা করেছেন এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া যেহেতু তিনি একজন গৃহবধূ এবং কোনো প্রকার আয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন সেহেতু তিনি তার স্বামীর অবৈধ উপায়ে সম্পদশালী হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন মো. হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের নামে পৃথক দুটি মামলা করার অনুমোদন দেয় দুদক।

এদিকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হুজ্জত উল্লাহর বিরুদ্ধে গত সোমবার মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর গতকাল মঙ্গলবারও তিনি নিত্যদিনের মতো তার দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মো. হুজ্জত উল্লাহর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।

এসব বিষয়ে জানতে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হুজ্জত উল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

দুদক কর্তৃক মামলার পরেও ডিপিডিসিতে কোন আইনী বলে মো. হুজ্জত উল্লাহ সংস্থাটিতে স্বপদে বহাল রয়েছেন কিংবা সংস্থা কেন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি এমন জিজ্ঞাসায় ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনা মনি চাকমা বলেন, যেহেতু দুদকের মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রমান অফিসিয়ালী ডিপিডিসি পায়নি তাই তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন সম্ভব হয়নি।

তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে দাপ্তরিক আদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমান নথিভুক্ত করতে হয়। ফলে মামলার তথ্য প্রমান অফিসিয়ালী পাওয়ার পরই মো. হুজ্জত উল্লাহ’র ব্যাপারে ডিপিডিসি কি ব্যবস্থা গ্রহন করবে সেই সিদ্ধান্ত নিবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসি’র সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ ব্যাপারে বলেন, ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হুজ্জত উল্লাহ’র বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে বিষয়টি দেশের প্রায় অধিকাংশ গণমাধ্যমেই প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষ চাইলে নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণে সেই আলোকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে বিষয়টি শুধুমাত্র সংস্থার কর্তা ব্যাক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। তিনি কি করবেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন নাকি অফিসিয়াল আদেশের অপেক্ষায় থাকবেন।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।